ইসলামের মুল ভিত্তি পাঁচটি

ইসলামের মুল ভিত্তি পাঁচটি । যা একজন মুমীনের ঈমান বহন করাকে প্রমানিত করে।
‎عَنِ ابْنِ عُمَرَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم «بُنِيَ الإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ: شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلَاةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ».
এখানে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ননা করেন ইসলামের মূল ভিত্তির অন্যতম হলো সিয়াম অর্থাৎ রোজা রাখা। আর এই রোজা শুধু এই উম্মত নয় বরং পৃথিবীর শুরু থেকে আজ অবদি এই ইবাদত চালু হয়ে আসছে। যেমন আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন।
‎يا ايها الذين امنوا كتب عليكم الصيام كما كتب على الذين من قبلكم لعلكم تتقون অর্থাৎ হে মুমিনগণ তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমন তোমাদের পূর্বসূরীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে করে তোমরা মুত্তাক্বী হতে পারো।
এই পবিত্র আয়াতে من قبلكم বাক্যটির দ্বারা পূর্বের সব মানুষদের উপর রোজা ফরজ ছিল বলে ঘোষণা করা হয়েছে। রোজা এমন একটি ইবাদত, যা শুধু উম্মতে মুহাম্মদীর উপর ফরজ করা হয়নি। বরং এটি পূর্ববর্তী শরীয়ত, পূর্ববর্তী উম্মত ও নবীদের উপরও ফরজ ছিল।
তবে তাদের রোজার ধরন ছিল ভিন্ন।

আর মাহে রমজান এজন্য দিয়েছেন যাতে করে বান্দা দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে তাকওয়াবান হতে পারে।
তাক্বওয়া মানে কি?
একবার উমর (রা.) উবাই ইবনে কাব (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, তাকওয়া কী? উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, আপনি কি কখনো কাঁটা বিছানো পথে হেঁটেছেন? উমর (রা.) বলেন, হ্যাঁ। উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, (কাঁটা বিছানো পথে) আপনি কিভাবে হেঁটেছেন? উমর (রা.) বলেন, খুব সাবধানে কষ্ট সহ্য করে হেঁটেছি, যাতে আমার শরীরে কাঁটা বিঁধে না যায়। উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, এটাই হচ্ছে তাকওয়া।
কাঁটাযুক্ত পথে কাঁটা থেকে বাঁচার জন্য মানুষ যেভাবে সতর্ক হয়ে চলে, ঠিক সেভাবে আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ যা নিষিদ্ধ করেছেন সেগুলো থেকে বেঁচে থাকা এবং আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার পাওয়ার জন্য আল্লাহ যা ভালোবাসেন সেই অনুযায়ী আমল করার নাম তাকওয়া।
সাঈদ বিন জুবায়ের (রহ.) বলেন, ‘তাকওয়া হলো যা তোমার ও তোমার পালনকর্তার অবাধ্যতার মাঝে বাধা সৃষ্টি করে।

আর এই তাকওয়ার এতই গুরুত্ব যে তাকওয়া ছাড়া তিনি বান্দার কোনো আমলই গ্রহন করেননা।
একটি হাদীসে এসেছে.
‎ان الله لاينظر الى صوركم واموالكم ولكن ينظر الى قلوبكم واعمالكم
অর্থাৎ আল্লাহ পাক তোমাদের বাহ্যিক অবয়ব বা ধন ঐশ্বয্যের দিকে দৃষ্টিপাত করেন না। তাহার দৃষ্টি তোমাদের অন্তরসমূহ আর আমলসমূহের উপর হয়ে থাকে।
রাসুলুল্লাহ সাঃ অন্যত্র বলেন তাকওয়া হলো অন্তরের বিষয়।
এ কারনে কুরআনের বিভিন্ন স্থানে তাকওয়া সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে।
মুত্তাকীদের প্রতিদানের বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন,
‎ان المتقين فى ظلال وعيون وفواكه مما يشتهون كلوا واشربوا هنيئا بما كنتم تعملون انا كذلك نجزي المحسنين
মুক্তাকিরা শীতল ছায়া ও ঝরনা বিশিষ্ট উদ্যানে নিজেদের পছন্দ মত ফল-মুলের মাঝে থাকবে । আর তোমরা যে সমস্ত আমল করেছ, তাহার বদৌলতে পানাহার করো। এমনিভাবে আমি মুত্তাকীদেরকে প্রতিদান দেই।
অন্যত্র ঘোষণা হয়েছে
‎ان للمتقين مفازا حدائق واعنابا وكواعب اترابا وكاسا دهاقا لا يسمعون فيها لغوا ولا كذابا
নিশ্চয়ই মুত্তাকীরা সফল। তাদের জন্য আছে বাগ বাগিচা এবং আঙ্গুর আর পরিচ্ছন্ন সমবয়সী এবং উপচিয়ে পড়ে এমন পানীর পেয়ালা। তাহারা তথায় অর্থহীন ও মিথ্যা কথা শুনতে পাবে না।

রমজান হলো তাকওয়া অর্জনের সেরা সময় কেননা এই মাসে শয়তান শৃংখলাবদ্ধ থাকে। সারাবছর আমরা শয়তানের ধোকায় বিভিন্ন গুনাহের কাজে লিপ্ত রই কিন্তু এই মাসে শয়তান নতুন করে বান্দাকে ধোকায় ফেলতে পারেনা। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন।
‎فتحت ابواب الجنه وغلقت ابواب النار
‎وسلسلت الشياطين
অর্থাৎ রমজানে বেহেশতের দরজা সমূহ খুলে যায়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ হয়ে যায়। এবং শয়তানকে কারাগারে আবদ্ধ করা হয়।

কেউ যদি চায় যে রোজার হালতে গোপনে পানাহার করবে কেউ তাকে নিষেধ করবেনা সত্বেও সে পানাহার থেকে বীরত থাকে। যদি ভুলক্রমেও কারো অযু বা গোসল করতে গিয়ে গলায় পানি চলে যায় সে পেরেশান হয়ে যায় রোজা কি ভেংগে গেলো কিনা ! সুযোগ থাকা সত্বেও কেন সে পানাহার করেনা ! কারন তার মনে এটা দৃঢ়ভাবেই থাকে যে তাকে আর কেউ না দেখলেও আল্লাহ দেখছেন।
সাধারন মানুষদের অন্তরের গভীর থেকে এই ভয়টা শুধু রমজানেই আসে।
তবে আমরা অনেকেই রোজা হালতেও গুনাহ ছাড়তে পারিনা যা মারাত্নক অন্যায় । রোজা রেখে ফেসবুক ইউটিউব টিকটকে নানান বাজে জিনিস দেখি এবং অযথা সময় নষ্ট করি। মিথ্যা কথা বলি গীবত করি।

‎قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من لم يدع قول الزور والعمل به فليس لله حاجه في ان يدع طعامه . وشرابه
এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা এবং মিথ্যার উপর আমল করা ছাড়তে পারেনি তার খাবার ও পানীয় দ্রব্য বর্জন করাতে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। (বুখারী)

কেউ যদি তাকওয়ার সাথে সিয়াম পালন করে তার জন্য কি পুরষ্কার !
হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, শাবান মাসের শেষ দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দানকালে বলেন, হে লোক সকল তোমাদের নিকট উপস্থিত, একটি মর্যাদাপূর্ণ এবং বরকতপূর্ণ মাস। এতে রয়েছে এমন এক রাত যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এ মাসে আল্লাহ সওম ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি এই মাসে একটি নেক কাজ করলো সে যেন অন্য কোন মাসে ফরজ কাজ করলো। যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল। সে যেন অন্য কোন মাসে ৭০ টি ফরজ কাজ আদায় করল। এ মাস ধৈর্য্যের মাস। আর ধৈয্যের বিনিময় হচ্ছে জান্নাত। সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস। (মেশকাত)

এ কারনে আমাদের উচিত রমজানকে কাজে লাগিয়ে বেশী বেশী নেক কাজ করা এবং মুত্তাকি হবার চেষ্টা করা।

তাকওয়ার তিনটি স্তর
১.  অন্তর ও সব অঙ্গ গুনাহ ও হারাম কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখা।
২.  মাকরুহ বা ঘৃণিত কাজ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা।
৩.  অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয় বিষয় থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা।

তাকওয়ার উপকারিতা :
১.  আল্লাহর সাহায্য ও নৈকট্য পাওয়া যায়।
২.  শেষ পরিণাম ভালো হয়।
৩.  উত্তম প্রতিদান পাওয়া যায়।
৪.  সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
৫.  দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা অর্জিত হয়।

আসুন আমরা রমজানে নিজেদের মুত্তাকি হিসেবে গড়ে তুলি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
আমিন।

মুফতি সাঈদ আহমাদ
পরিচালকঃ কলরব শিল্পীগোষ্ঠী।
মুহতামিমঃ মাদরাসাতুল আসআ’দ আল ইসলামীয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post বিয়েতে কনের অনুমতি নেওয়ার পদ্ধতি

Goto Top